IELTS নিয়ে ভাবছেন? বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া কিংবা ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য IELTS পরীক্ষার কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু IELTS আসলে কী, কিভাবে এই পরীক্ষায় ভালো ফল করা যায়, আর এর মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ারেই বা কী সুযোগ আসতে পারে – এই সবকিছু নিয়েই আজকের আলোচনা।
IELTS (International English Language Testing System) হলো ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের একটি আন্তর্জাতিক পরীক্ষা। ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে পড়াশোনা বা কাজ করতে যেতে চাইলে, আপনার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের জন্য এই পরীক্ষাটি দেওয়া দরকার।
IELTS কি?
IELTS পরীক্ষা মূলত চারটি অংশে আপনার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই করে: শোনা (Listening), পড়া (Reading), লেখা (Writing) এবং বলা (Speaking)। এই চারটি মডিউলের মাধ্যমেই বোঝা যায় ইংরেজি ভাষায় আপনি কতটা দক্ষ।
IELTS পরীক্ষার ধরন
IELTS দুই ধরনের হয়ে থাকে: Academic এবং General Training।
- Academic: যারা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যেতে চান, তাদের জন্য এই পরীক্ষাটি প্রযোজ্য।
- General Training: যারা চাকরি বা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যেতে চান, তাদের জন্য এই পরীক্ষাটি দরকারি।
কোনটি আপনার জন্য প্রয়োজন, তা আপনার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।
IELTS পরীক্ষার পদ্ধতি
IELTS পরীক্ষায় চারটি অংশ থাকে। চলুন, এক নজরে দেখে নেই প্রতিটি অংশে কী কী থাকে:
- Listening (শোনা): এখানে আপনাকে একটি অডিও ক্লিপ শুনতে হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ক্লিপটি সাধারণত কথোপকথন বা লেকচারের আকারে থাকে। সময় থাকে ৩০ মিনিট, এবং ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
- Reading (পড়া): এই অংশে আপনাকে কিছু অনুচ্ছেদ (passage) দেওয়া হবে এবং সেই অনুচ্ছেদগুলো থেকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। Academic Reading এবং General Training Reading-এর প্রশ্নপত্র ভিন্ন হয়। সময় থাকে ৬০ মিনিট, এবং ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
- Writing (লেখা): এখানে আপনাকে দুটি task দেওয়া হবে। Task 1-এ সাধারণত একটি গ্রাফ, চার্ট বা ডায়াগ্রাম বর্ণনা করতে হয়। Task 2-এ একটি প্রবন্ধ (essay) লিখতে হয়। Academic এবং General Training Writing-এর Task 1 ভিন্ন হয়। সময় থাকে ৬০ মিনিট।
- Speaking (বলা): এই অংশে একজন পরীক্ষকের সাথে সরাসরি কথা বলতে হয়। এখানে আপনার ফ্লুয়েন্সি, ভোকাবুলারি, গ্রামার এবং উচ্চারণ দেখা হয়। সময় থাকে ১১-১৪ মিনিট।
IELTS স্কোর কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
IELTS-এ প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা করে স্কোর দেওয়া হয়। এই স্কোরগুলোকে একসাথে করে একটি গড় স্কোর (overall band score) বের করা হয়। IELTS-এর স্কোর ১ থেকে ৯ পর্যন্ত হয়। আপনার স্কোর আপনার ইংরেজি ভাষার দক্ষতার স্তর নির্দেশ করে। সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য ৬.৫ বা তার বেশি স্কোর প্রয়োজন হয়।
স্কোরিং পদ্ধতি
IELTS-এর স্কোরিং পদ্ধতি একটু জটিল। প্রতিটি অংশের উত্তরপত্র আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়। Listening এবং Reading-এ সঠিক উত্তরের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে স্কোর দেওয়া হয়। Writing এবং Speaking-এ আপনার ভাষার ব্যবহার, শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ এবং উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে স্কোর দেওয়া হয়।
এখানে একটি টেবিল দেওয়া হলো, যেখানে স্কোর অনুযায়ী আপনার দক্ষতার স্তর কেমন, তা জানতে পারবেন
IELTS-এর সুবিধা
IELTS পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি অনেক সুবিধা পেতে পারেন। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা আলোচনা করা হলো:
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা: অনেক বিশ্ববিদ্যালয় IELTS স্কোর চায়। আপনার যদি ভালো স্কোর থাকে, তাহলে বিদেশে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সহজ হবে।
- চাকরির সুযোগ: অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের অফিসে কাজ করার জন্য IELTS স্কোর দেখতে চায়। ভালো স্কোর থাকলে আপনার চাকরির সম্ভাবনা বাড়বে।
- Visa-র সুবিধা: কিছু দেশে Visa পাওয়ার জন্য IELTS স্কোর দরকার হয়। বিশেষ করে, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এই স্কোর খুব দরকারি।
IELTS দিয়ে চাকুরির সম্ভাবনা
IELTS শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, চাকরির ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অনেক কোম্পানি চায় তাদের কর্মীরা যেন ইংরেজিতে দক্ষ হয়। বিশেষ করে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে ভালো বেতনের চাকরি পাওয়ার জন্য IELTS স্কোর একটি বড় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়।
যেমন:
- কল সেন্টার ও বিপিও (BPO) সেক্টরে প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে, যেখানে ভালো ইংরেজি জানা লোক প্রয়োজন।
- বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার জন্য IELTS একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা।
- শিক্ষকতা পেশায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য ভালো IELTS স্কোর থাকা দরকার।
IELTS প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন?
IELTS পরীক্ষার জন্য সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া খুব জরুরি। কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো:
- নিয়মিত অনুশীলন: প্রতিদিন ইংরেজি শোনা, পড়া, লেখা এবং বলার অভ্যাস করুন।
- মক টেস্ট: পরীক্ষার আগে কিছু মক টেস্ট দিন। এতে আপনি পরীক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে পারবেন।
- ভালো মানের বই: IELTS-এর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ভালো মানের কিছু বই অনুসরণ করুন।
- কোচিং: প্রয়োজন মনে করলে ভালো কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারেন।
IELTS পরীক্ষা আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস থাকলে আপনি অবশ্যই ভালো ফল করতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি কেন? আজই আপনার IELTS journey শুরু করুন, আর পৌঁছে যান আপনার সাফল্যের লক্ষ্যে!
0 Comments