অভিনন্দন! আপনি মা হতে চলেছেন, এটি খুবই আনন্দের একটি খবর। এই সময়টাতে নিজের শরীরের প্রতি একটু বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর এবং গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য প্রিনেটাল ভিটামিন (Prenatal Vitamins) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, জেনে নেই প্রিনেটাল ভিটামিন কী, কেন প্রয়োজন, এবং আপনার জন্য সঠিক ভিটামিনটি কিভাবে বেছে নেবেন।
প্রিনেটাল ভিটামিন কী?
প্রিনেটাল ভিটামিন হলো বিশেষ কিছু ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের সমন্বয়, যা গর্ভবতী মহিলা এবং তাদের গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। সাধারণ মাল্টিভিটামিনের তুলনায় এতে ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় জরুরি।
কেন প্রিনেটাল ভিটামিন প্রয়োজন?
গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরকে নিজের এবং আপনার সন্তানের জন্য কাজ করতে হয়। তাই এই সময় আপনার শরীরে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা বেড়ে যায়। শুধু খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সবসময় সম্ভব হয় না। প্রিনেটাল ভিটামিন এই পুষ্টির অভাব পূরণ করে এবং আপনার সন্তানকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
শিশুর জন্মগত ত্রুটি কমায়
ফলিক অ্যাসিড একটি বি ভিটামিন, যা নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (Neural Tube Defects) নামক জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমায়। এই ত্রুটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থার আগে এবং প্রথম দিকে যথেষ্ট ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি কমানো যায়।
মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
আয়রন আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় খুব দরকারি। এটা অ্যানিমিয়া (Anemia) বা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। ক্যালসিয়াম আপনার শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে, পাশাপাশি আপনার হাড়কেও মজবুত রাখে।
শিশুর সঠিক বিকাশ
ডিএইচএ (DHA) একটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। প্রিনেটাল ভিটামিনে থাকা অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস শিশুর শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সঠিক গঠনে সাহায্য করে।
কখন প্রিনেটাল ভিটামিন শুরু করা উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের আগে থেকেই প্রিনেটাল ভিটামিন শুরু করা ভালো। কারণ, শিশুর নিউরাল টিউব গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহে তৈরি হয়, যখন আপনি হয়তো জানতেও পারেন না যে আপনি গর্ভবতী। তাই আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমানো যায়।
প্রিনেটাল ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
প্রিনেটাল ভিটামিনে কিছু জরুরি উপাদান থাকা আবশ্যক। এগুলো আপনার এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে:
ফলিক অ্যাসিড
এটা নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা উচিত।
আয়রন
রক্তশূন্যতা থেকে বাঁচায় এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখে। প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।
ক্যালসিয়াম
হাড় ও দাঁত মজবুত করে। প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার।
ভিটামিন ডি
ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতিদিন ৬০০ আইইউ (IU) ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
ডিএইচএ (DHA)
মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশে সাহায্য করে। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ডিএইচএ গ্রহণ করা উচিত।
কীভাবে সঠিক প্রিনেটাল ভিটামিন নির্বাচন করবেন?
বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রিনেটাল ভিটামিন পাওয়া যায়। আপনার জন্য কোনটি সঠিক, তা নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
উপাদানের তালিকা দেখুন
ভিটামিনের প্যাকেজের গায়ে লেখা উপাদানগুলো ভালোভাবে দেখে নিন। ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ডিএইচএ আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন
কোন ভিটামিন আপনার জন্য ভালো হবে, তা আপনার ডাক্তারই ভালো বলতে পারবেন। তাই ভিটামিন শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ব্র্যান্ডের সুনাম
ভালো ব্র্যান্ডের ভিটামিন ব্যবহার করা উচিত। কেনার আগে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের মতামত জেনে নিতে পারেন।
অন্যান্য বিষয়
কিছু ভিটামিন হজম করতে সমস্যা হতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে ডাক্তারকে জানান এবং অন্য ভিটামিন চেষ্টা করুন।
প্রিনেটাল ভিটামিন সেবনের নিয়ম
- ভিটামিন সবসময় খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করুন। এতে হজম হতে সুবিধা হয় এবং বমি বমি ভাব কম লাগে।
- প্রতিদিন একই সময়ে ভিটামিন গ্রহণ করুন, যাতে মনে থাকে।
- ডোজ সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করুন। নিজের ইচ্ছামতো ডোজ পরিবর্তন করবেন না।
প্রিনেটাল ভিটামিন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা প্রিনেটাল ভিটামিন নিয়ে আপনার মনে আসতে পারে:
প্রিনেটাল ভিটামিন কি খাবার বিকল্প?
- না, প্রিনেটাল ভিটামিন খাবারের বিকল্প নয়। এটা শুধু আপনার ডায়েটের পরিপূরক। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও জরুরি।
প্রিনেটাল ভিটামিন কি বমি বমি ভাব বাড়ায়?
- কিছু ভিটামিনের কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে, বিশেষ করে আয়রনের কারণে। তবে খাবার সাথে খেলে বা অন্য ব্র্যান্ডের ভিটামিন ব্যবহার করলে এই সমস্যা কমানো যায়।
আমি কি শুধু ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট নিতে পারি?
- ফলিক অ্যাসিড অবশ্যই জরুরি, তবে শুধু এটা যথেষ্ট নয়। প্রিনেটাল ভিটামিনে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলসও থাকে, যা আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য দরকারি।
প্রিনেটাল ভিটামিন কি গর্ভাবস্থার পরেও দরকার?
- হ্যাঁ, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার শরীরে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা বেশি থাকে। তাই গর্ভাবস্থার পরেও প্রিনেটাল ভিটামিন চালিয়ে যাওয়া ভালো।
0 Comments